বার্ধক্যের সুস্হতা ও
প্রশান্তির লক্ষে সচেতনতা
আজকের তরুনই
আগামীর প্রবীন। ৬০ ঊর্ধ্ব প্রবীন নারী-পুরুষ কোন না কোন জটিল রোগে
ভোগেন।বার্ধ্বক্যে শরীরিক-মানসিক গঠন,চিন্তা-ভাবনা,সক্ষমতা,ব্যক্তিত্ব এবং
সিদ্বান্তে পরিবর্তন আসে। দেশে বর্তমানে ১কোটি ৪০লাখ প্রবীন জনগোষ্ঠি রয়েছে।
জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞদের মতে গত ৪ বছরে ২.৫% হারে প্রবীনের সংখ্যা বৃদ্বি পেয়েছে। এ
হার বাড়তে থাকলে আগামীতে প্রবীন জনগোষ্ঠির ঊল্লেখযোগ্য অংশ সেবা ও চিকিৎসা ছাড়াই
মৃত্যুবরন করবে বলে সতর্কবানী ঊচ্চারন করেছেন।
Group Meeting Discussion of Health Awareness For Old Ages Peace and Care
বয়স্কদের
চার ধরনের রোগ বা উপসর্গ চিন্হিত হয়:
১। চলাচলে
অক্ষমতা
২। সিদ্বান্তে
অক্ষমতা
৩। বুদ্বিগত
অক্ষমতা
৪। মল-মুত্র বেগ
ধারনে অক্ষমতা।
এছাড়া রয়েছে-
ডায়াবেটিস,উচ্চরক্তচাপ, উত্তেজনা,ঘুমের অভাব,ভুলে যাওয়া,হতাশা,একই কথা বারবার বলা,এ্যাজমা, আর্থাইটিস, হৃদরোগ,কিডনি
জটিলতাসহ আরো নানা ধরনের রোগ। তাই এ সময়ে প্রবীনদের যত্ন এ সেবা নেয়া অত্যন্ত
জরুরী। আমাদের দেশে
অনেক পরিবারেই বার্ধক্যে উপনীত হওয়া মা-বাবাকে দিয়ে অমানুষিক কাজ করিয়ে নেওয়া হয়।
কোন কোন ক্ষেত্রে মা-বাবার সম্পদ জোর করে নিয়ে নেওয়া হয়। আবার কখনো বা তাদেরকে
তাদের আত্নীয়-সজন,বন্ধু-বান্ধব থেকেও বিচ্ছিন্ন রাখা হয়। এসকল আচার আচরন শারীরিক
বা মানসিক নিপিড়ন হিসাবে পরিগনিত হয়। সকল ছেলে-মেয়েকেই
এই সকল আচরন পরিহির করা ঊচি।
A Part of Group Meeting
প্রবীনদের
জন্য করনীয়:
সক্ষমতা ও
প্রশান্তির জন্য কর্মক্ষম থাকা,রোগের ঝুকি নিয়ত্রনে রাখা- এ ক্ষেত্রে তাদের
ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়া। মাসে অন্তত ১বার ব্লাড প্রেসার/ব্লাড সুগার /ওজন ইত্যাদি
ঝুকি নির্নয় করে নিয়ত্রনে রাখা। পরিবেশ পরিবর্তনও ব্যায়ামের পরামর্শ দিয়ে
প্রবীনদের প্রশান্তিতে রাখা। তবে ব্লাডপ্রেসার ও ওজন মাসে ১বার করা হলেও
ইসিজি,ব্লাড সুগার,ব্লাড কোলেষ্টেরল,দৃষ্টিশক্তি,হিমোগ্লোবিন,শ্রবণ ক্ষমতা,দাত
ও মাড়ির পরীক্ষা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করানো প্রয়োজন।
প্রবীনদের
পরিচর্যার মডেল হিসাবে তার খোজ নিন,তিনি কেমন আছেন,কুশল বিনিময় করুন,সুন্দর
সম্পর্কর নামে বিনয়ের সঙ্গে ডাকুন। তার শোয়ার বিছানাও পোশাক পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্হা করুন, এবং
কিছু সময় পাশে বসে তার সাথে কথক বলুন। জানতে চান কেমন আছেন,কেমন লাগছে এ ক্ষেত্রে
হাত ধরে একে একে সব সমস্যাগুলি শুনে সমাধানের ব্যবস্হা নিন। এভাবেই বার্ধক্যে
সুস্হতা ও প্রশান্তির লক্ষে সচেতনতা তৈরী করুন এবং প্রবিনদের ভাল থাকার পথ সুগম
করুন।
গল্প
হলেও সত্যি:
আকরাম হোসেন
বি.আর.টি.সি গাড়ির ড্রাইভার। দীর্ঘ ৩০ বছর ড্রাইভিং করে ৩তিন ছেলেমেয়েকে মানুষ
করেছেন। ছেলেকে বি.আর.টি.সিতে চাকরী নিয়ে
দিয়েছেন। ২টি মেয়ে ও ছেলেটিকে ভাল ঘর দেখে বিয়েও দিয়েছেন। এখন তারা আলাদা আলাদা
সংসার করে যাচ্ছেন। মেয়ের জামাইদের আচার /স্বভাব ভাল না হওয়ায় তাদের সাথে সম্পর্ক
নেই বললেই চলে । মেয়েরা মাঝে মধ্যে মা-বাবার খোজ খবর নেন তবে বাড়ীর কছে বিয়ে
হয়েছিল বলে তারা খোজ খবর নিতে পারছেন। কিন্তু ছেলেটি আজ অনেকদিন বাবা-মার খবর নেন
না। ছেলের দাবী মতে ছেলে কে ঘর-বাড়ী জমি সব লিখে দিতে হবে নইলে সে বাড়ীতে থাকবে
না,বাড়ীতে আসবে না। এটি ছেলের বউয়ের ও দ্বাবী। এখন ছেলে আর বউমা কর্মস্হলে সিলেটে
বাসাভাড়া করে অবস্হান করছে।
Akram Hossain and His Wife
এদিকে আকরাম
হোসেনের স্ত্রী হঠাৎ স্টোক করে শারীরিকভাবে দুর্বল ও আধো আধো উচ্চারনে কথা
বলেন। সঠিক চিকিৎসার অভাবে অসুস্হ শরীরে সংসারের যাবতীয় কাজ করে স্বামী-স্ত্রী
কোন মতে দিনাতিপাত করছেন। আকরাম হোসেন স্ত্রীর অসুস্হতা ও ছেলে-মেয়েদের অমানবিক
আচরনে দিশেহারা হয়ে পড়েন। ড্রাইভিংয়ে ও আর মন বসাতে পারছেন না ।অনিয়মিত হতে থাকলো
কর্ম স্হলে যাওয়া। হঠাৎ তিনিও একদিন স্টোক করলেন। এক সাইড প্যারালাইজড হয়ে এখন
বাড়ীর মধ্যে বন্দী জীবন যাপন করছেন। টাকার অভাবে,সঠিক চিকিৎসা,সঠিক যত্নের অভাবে ও
অবহেলায় লাঠিতে ভর দিয়ে কোন মতে এক পা দু পা হাটাহাটি করার চেষ্টা করেন। আয়
রোজগার না থাকায় মাছ-মাংস তো জেটেই না, এমনকি কাচা বাজারও করতে পারেন না। বাড়ীর
পাশে ঝোপ-ঝাড় থেকে কচুশাক, কচুর লতি,মেটে আলু,ওল তুলে প্রতিদিন সিদ্ব করে ভর্ত
বানিয়ে খান।
অথচ এই আকরাম হোসেনর আকরাম ড্রাইভার বলে গ্রামে আনেক ডাক নাম ছিল। এক সাথে অনেক
মানুষকে গরু জবাই করে খাইয়েছেন।
আজ গ্রামের
মানুষ তো দুরের কথা নিজের ছেলে পর্যন্ত বাবা-মায়ের খবর নিচ্ছে না। ছেলে হিসাবে
বাবা-মায়ের সু-চিকিৎসা করানো,তাদের সেবা যত্ন এ বিষয়ে তার কোন আগ্রহ নাই। তাকে বারবার খবর দিলেও সে তার সংসার নিয়ে
ব্যাস্ত আছে, ছুটি নেই,চাকরীর সমস্যা হবে বলে জানায়। যে মা ১০মাস ১০দিন
গর্ভে ধারন করেছে, ভুমিষ্ট হওয়ার পর বুকের দুধ পান করিয়েছে,ভিজা জায়গায় নিজে সুইয়ে
সুকনো ও গরম জায়গায় সন্তানকে রেখেছে, না ঘুমিয়ে সাড়া রাত জেগে থেকে বার বার ভেজা
কাপড় বদলে দিয়েছে। একটু কান্নার আওয়াজেই হঠাৎ লেগে যাওয়া ঘুমের ঘোর কেটে গেছে।
সন্তানের হাসিতে মা হেসেছে, আর কান্নায় মায়ের চোখের চেয়ে অন্তরই ভিজেছে যার বেশী।
সেই মা-ই আজ সবচেয়ে বেশী অবহেলিত সন্তানদের কাছে। এমন আরো হাজারো গল্প চারদিকে একটু চোখ মেলে তাকালে/খোজ নিলে অহরহ মিলবে
এমন ঘটনা। হায়রে দুনিয়া। হায়রে মানুষ।