পরিবার পরিকল্পনা ও এর প্রয়োজনীয়তা
সাধারন অর্থে পরিবার পরিকল্পনা বলতে জন্ম
নিয়ন্ত্রনকেই(Birth Control) বুঝানো হয়ে থাকে। জীবনকে সুন্দর এবং সুখী করে গড়ে
তোলার জন্য নিজেদের ইচ্ছামত পরিবার গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা করা হয় তাকে পরিবার পরিক্পনা
বলা হয়। বাংলাদেশ হল একটি খুবই সীমিত আয়ের/সম্পদের দেশ। কিন্তু এ দেশে জনসংখ্যা
আনুপাতিক হারে খুবই বেশী। এই অধিক জনসংখ্যার কারনে নানাবিধ অসুবিধায় পরতে হয়।
জনসংখ্যা বৃদ্বির কারনে মাথাপিছু চাষাবাদের জমি ক্রমেই কমে যাচ্ছে এবং এ
জমিতে উত্পাদিত খাদ্যশস্য দ্বারা সারা
বছরের খাবারের চাহিদা পুরন করা সম্ভব হয় না। তাই প্রতিবছর আমাদের খাদ্যশস্য আমদানী
করে চাহিদা পুরন করতে হয়।
Group Meeting About Birth Control
বেশী জনসংখ্যার কারনে বসবাসের পরিবেশ ও নষ্ট হয়।
অধিক জনসংখ্যার কারনে কম জায়গায় গাদাগাদী করে অনেক মানুষকে অল্প জায়গায় বসবাস করতে হয়। এভাবে অনেক মানুষ অল্প জায়গায়
বসবাস করলে সবাইকে একই টিউবয়েল ও বাথরুম ব্যাবহার করতে হয়,ফলে সেখানে নানাবিধ
রোগের উপদ্রোব দেখা দেয়।
অধিক জনসংখ্যার কারনে ছোট ছেলে মেয়েদের
পড়াশোনার মারাত্বোক ব্যাঘাত ঘটে।একই স্কুলে অনেক ছাত্রছাত্রী ভর্তি হলে
শিক্ষকদের পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটে। যে বাড়ীতে অনেক গুলো ছেলে-মেয়ে থাকে সে বাড়ীর বড়
মেয়েকে তাদের দেখাশোনা করতে হয় বলে তার
নিজের পড়াশোনা করা হয় না। অধিক সন্তানের কারনে পরিবারে অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের
হলে অল্প বয়সেই অভিভাবকগন মেয়েদের বিয়ে
দিতে বাধ্য হন। ফলে বাল্যবিবাহ ও তত্পরবর্তি
স্বাস্হ্যগত জটিলতা এবং পারিবারিক কলহ বৃদ্বি পায়।
Seminar About Birth Control Displayed by UP
অধিক জনসংখ্যার কারনে ক্রমেই বেকারত্বের সংখ্যা
বৃদ্বি পাচ্ছে। আর বেকারত্বের কারনে যুবসমাজ চুড়ি-ডাকাতি,রাহাজানি,ছিনতাই,অপহরনসহ
নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত হয়। মোট কথা সমাজের সর্বক্ষেত্রে অধিক জনসংখ্যার কারনে
সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই সমাজকে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই
জনসংখ্যা সীমিত রাখতে হবে। আর জনসংখ্যা সীমিত রাখার একমাত্র কৌশলই হচ্ছে পরিকল্পিত
জন্মনিয়ন্ত্রন। এখানে কিছু প্রচলিত জস্মনিয়ন্ত্রন পদ্বতিসমুহ তুলেধরা হল:
খাবার বড়ি:Mouth Pill
বাংলাদেশে খাবার বডি হলো সর্বাধিক ব্যবহৃত একটি
জস্মনিয়ন্ত্রন পদ্বতি, এটি নিরাপদ ও কার্যকর ।সকল বয়সী মহিলারা খাবার বডি ব্যাবহার করতে পারেন।এটি সম্পুর্ন
একটি অস্হায়ী পদ্বতি এবং যে কোন সময় খাবার বডি বন্ধ করে আবার বাচ্ছা নেয়া বা
গর্ভধারন করা যায়। খাবার বড়ি গ্রহনের পর প্রথমে মাথা ব্যাথা, মাথা ঘোড়ানো বা
বমিবমি ভাব হতে পারে। তাছাড়া যে সকল মায়েরা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান তারা খাওয়ার
বড়ি ব্যবহার করলে বুকের দুধ কমে যেতে পারে। তাই বাচ্চা জন্ম নেয়ার পর ৬মাস পর্যন্ত
খাওয়ার বড়ি খেতে নিষেধ করা হয়ে থাকে।
Birth Control Pills
কপার-টি:Copper-T
বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা পদ্বতিতে ‘কপার টি’ ১০
বছর মেয়াদীতে ব্যাবহৃত হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী এ ‘কপার টি’ প্লাষ্টিক জাতীয় পদার্থ
দ্বারা তৈরী একটি ছোট যন্ত্র,যা জরায়ুতে পরানো হয়। এটি দেখতে ইংরেজি T অক্ষরের মত এবং এতে কপার থাকে বিধায় একে কপার-টি
বলে। কপার-টির এক প্রান্তে একটি সুতা থাকে, যা পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ুতে কপার টির
উপস্হিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এটি যাদের জীবিত সন্তান আছে এবং দীর্ঘমেয়াদে
গর্ভনিরোধ করতে চান তাদের জন্য কপার-টি একটি উপযুক্ত পদ্বতি।
গর্ভ নিরোধক ইনজেকশন:Injection
গর্ভ নিরোধক ইনজেকশন মহিলাদের জন্য কর্যকর
অস্হায়ী একটি পরিবার পরিকল্পনা পদ্বতি। ১টি ইনজেকশন ৩মাস পর্যন্ত গর্ভসঞ্চার রোধ
করতে পারে। সাধারনত মাসিক শুরুর প্রথম ৫দিনের মধ্যে প্রথম ডোজ ইনজেকশন নিতে হয়।
সন্তান জন্ম দেয়ার পর শিশুকে বুকের দুধ পান করালে বাচ্চার ৬মাস বয়সের পর আর বুকের
দুধ পান না করালে প্রসবের পরপরই গর্ভনিরোধক ইনজেকশন নেয়া যায়।
কনডম:Condom
পুরুষদের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর ব্যবহার উপযোগী জন্মনিয়ন্ত্রন
পদ্বতি।কনডম সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে জন্মনিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি যৌনরোগ প্রতিরোধে
ও সহায়তা করে। তবে সঠিক নিয়মে না পড়লে কনডম ফেটে গিয়ে গর্ভধারনের আশংকা থেকে যায়।
স্হায়ী পদ্বতি:Parmanant Methord
স্হায়ী পদ্বতি অধিকতর কার্যকর,নিরাপদ এবং
সম্পুর্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন একটি জন্মিনয়ন্ত্রন পদ্বতি। পুরুষদের স্হায়ী
পদ্বতির নাম ভ্যাসেকটমি এবং মহিলাদের স্হায়ী পদ্বতির নাম টিউবেকটমি। যে সকল
দম্পতিদের কাঙ্খিত সংখ্যক সন্তান রয়েছে আর ভবিষ্যতে সন্তান নিতর চান না তারা
স্হায়ী পদ্বতি বিছে নিতে পারেন।
এবার একটি জীবন থেকে নেয়া ছোট গল্প আপনাদের
জন্য
আজ আমি সুখী:
তখন আমার বয়স ১৬ বছর । মা-বাবার অমতে বিয়ে করি।
আমি ছোট ছিলাম আর আমার পরিবারের সঙ্গে এবং আমার স্বামীর পরিবারের সঙ্গে আর্থিক,
শিক্ষা, সামাজিক বৈষম্যের অনেক পার্থ্যক্য ছিল। তাই তারা আমাকে মেনে নিতে পারেনি।
তাদের আমি দোষ দেই না। বিয়ের ৫ বছর পর প্রথম সন্তান জন্মের পরে তারা আমাদের বিয়ে
মেনে নেন। শোচনীয় অভাবের মধ্যে আমার শশুরের সহায়তায় আমি এইচ.এস.সি, ডিগ্রি এবং
মাস্টর্স পাস করি। আধুনিক এই যুগে আমি এক টানা ৩দিন শুধু পানি পান করে কাটিয়েছি।
মাসের পর মাস সাবান ছাড়া গোসল করেছি। ২টাকার একটি কাপড় ধোয়া ডিটারজেন্ট কিনে তার
এক-তৃতীয়াংশ মাথা ধোয়া ও বাকি অংশ দিয়ে কাপড় ধুয়েছি। পড়নের কাপড় ছিড়া বলে বোরকা
পড়ে ৫ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেটে কলেজে গিয়েছি। রাতে শোয়ার মত ভাল বিছানা কিংবা
আলাদা ঘর ছিলনা। এসব কথা এখন মনে হলে শিউরে উঠি,ভয়ে আতংকিত হই। কত বড় ভুল করেছিলাম
আমি। ভাগ্যিস স্বামী নামের ঐ ভাল ব্যাক্তিটি আমার পাশে ছিল। তানা হলে আমার কি
দুর্দশাই না হতো। ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে বাসায় ২ বেলা ছাত্র পড়িয়েছি। সুই-সুতার কাজ করে কত কষ্টে যে দিনাতিপাত
করেছি তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সঠিক সিদ্বান্ত নেযার মত বয়স আমার ছিল না বলেই
এত কষ্ট আমার জীবনের প্রথম ভাগে তীক্ত অভিগ্গতায় বুঝেছি। বর্তমানে বিয়ের ১৭ বছর পাড় করেছি। এখন একটি
সরকারী চাকরী করছি, ভাল বেতন পাচ্ছি। আজ আমি এত কঠিন জীবন পার করে কিছুটা সুখের
মুখ দেখেছি। আজ আমি সুখি।